প্রথমেই কিংবদন্তী আইয়ুব বাচ্চুকে স্মরন করে নিলাম শ্রদ্বাভরে যাকে ছাড়া বাংলা ব্যান্ডের জগতকে অস্বীকার করা হয়। এই ব্যান্ড জগতকে একদিনে গড়ে তোলা হয় নাই। গড়ে তোলা হয়েছিলো তিল তিল করে। সকলেই আশংকিত ছিলো যে - এই ব্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ টা কে কতোদূর নিয়ে যাওয়া যায়। আইয়ুব বাচ্চু শুরু করেছিলেন প্রথমে- Love Runs Blind নামের ব্যান্ড তৈরী করার মাধ্যমে। তারপরে থেকে সেটা কে নিয়ে আসা হয়- ঢাকাতে এবং নাম দেয়া হয়- Little River Band এবং আজো সেটা স্বদর্পে টিকে আছে। আইয়ুব বাচ্চু ভাই কে দেখে ধীরে ধীরে অনেক ব্যান্ড তৈরী হয় যারা এক সময় অনেক নাম করে এবং অনেক স্মরনীয় গানের সৃষ্টি দেয়- ধরতে গেলে নোভা, রেনেসা, সোলস, উইনিং, অবসকিওর, ফিডব্যাক, প্রমিথিউস, গুরু খ্যাত আজম খান, আগুন (আলাদা করে বলতে গেলে), ফিলিংস খ্যাত জেমস (নগর বাউল) এবং চাইম বা আরো কিছু ছোট ছোট গানের দল যাদের সৃষ্টি ছিলো অনবদ্য এবং চির স্মরনীয়। একসময় কার চট্রগ্রামের ব্যাংক আইয়ুব বাচ্চু এর এলআরবি এর গানের দলে ছিলো বর্তমানের সোলসের জনপ্রিয় ভোকাল পার্থ এবং আরো একজন পারফরমার নাম- নাসিম ভাই। তারপরে ছিলেন রেনেসা ব্যান্ডের নকীব খান। তাদের কয়েকজনের একটি গানের প্রোগ্রাম বিটিভিতে দেখার জন্য সেই পরিমান কষ্ট করতে হতো। তবে রেডিও বা ওয়াকম্যান দিয়ে কানে হেড ফোন লাগিয়ে তাদের গান অনেক ভালো লাগতো । সকলের পরিশ্রমে শুরু হয়েছিলো বাংলাদেশী ব্যান্ড জগতের সংগঠন নাম- বামবা। কোথাও যদি কখনো শুনতাম বামবার কনসার্ট হবে- তাহলে সারা দেশে হুড়োহুড়ি পড়ে যাইতো। ধরেন রাজশাহী শহরে বামবার কনাসর্ট হবে- সেই কনসার্টে যাওয়া এবং অংশগ্রহন করা বা টাকা পয়সা ম্যানেজ করা- সেই বয়সে সেটা ছিলো এক কথায় অসম্ভব ব্যাপার। বিশেষ করে - বাংলােদেশ আর্মি ষ্টেডিয়ামে বামবার কনসার্ট এবং তার রেকর্ডে ক্যাসেট কখনো ভোলার মতো না। অনেক কষ্টে টিফিনের টাকা বাচিয়ে বা কয়েক টাকা ম্যানেজ করে একটা ক্যাসেট কিনে জনে জনে শোনা বা গানগুলো লিখে লিখে মুখস্থ করা এবং তা বন্ধুমহলে আবৃত্তি করা বা গান গাওয়া- সেই ব্যাপারটাও ছিলো অনেক আনন্দের। আমার নিজস্ব কোন হাই ফাই ক্যাসেট প্লেয়ার ছিলো না- থাকার মধ্যে ছিলো একটা ছোট খাটো ওয়াকম্যান যা কানে লাগিয়ে হেডফোনে লাগিয়ে গান শোনতাম। মাঝে মাঝে কানে হেডফোন লাগিয়ে একা একা হেটে হেটে গান শোণা (ব্যাটারীতে চার্জ দিয়ে আর বাকী সময় ইলেকট্রিক প্লাগইন করে )- আমার অনেক প্রিয় ছিলো। কিন্তু আশে পাশে সেই প্রকৃতির কয়েকটা ডেক সেট যখন বেজে উঠতো- তখন আর নিজের কোন ক্যাসেট প্লেয়ার লাগতো না। পুরো ক্যাসটটা মনোযোগ দিয়ে শোনাটাই একটা কাজ হয়ে দাড়াতো। দামী দামী ক্যাসেট প্লেয়ারের ভীড়ে হয়তো আমার কয়েক টাকা দামের ওয়াকম্যান টাইপের প্লেয়ার টার কোন ভ্যালূই নাই কিন্তু সেই সময়কার ফিলিংসটা আজো মনের মধ্যে গেথে আছে। পরে হলে যখন এডমিট হই ১৯৯৮ সালে- তখন হলের এক বন্ধু যখন শোনে আমি গান শুনেতে ভালোবাসি, সেও গান শুনতে ভালোবাসে- সেই সময়ে কয়েক হাজার টাকা খরচ করে বিশাল এক সেট বানায় - ২ টা বিশাল সাউন্ডবক্স দিয়ে- যা দিয়ে সে গান শুনলে পুরো ৬ তালা হল বিল্ডিং কাপতো। প্রথমে প্রতীচি গনরুমে তার বিশাল সাউন্ডবক্সে বাংলা ব্যান্ড গান শোনা - একটা বিশাল স্মৃতি। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং আশে পাশে র মানুষ জন ও টের পেয়ে যাইতো আর তারা বলে বেড়াতো হাসান ( আমাকে সিলেট ভেটেরিনারি কলেজের সকলেই হাসান নামে ডাকতো) ভাইরা গান ছেড়েছে- চল শুনি। অনেক দূরে পাহাড়ের পাদদেশে এক টিলার পাশে (আলুরতল, অক্সিডেন্টাল রোডে বন শুরু হবার আগে - এক বৃদ্ব বয়স্ক বুড়ো চাচা- বয়স প্রায় ৯০ বছর ( বাড়ি ছিলো কিশোরগন্জ) কাছে ডেকে বলেছিলো- বাবাজীরা তোমরা কার গান শোনো? তখন আমি বলেছিলাম- চাচা আমরা বাংলা ব্যান্ডের গান শুনি। তো উনারা বলতো - এরকম একটা প্রজন্ম ই আমরা স্বাধীনতা যুদ্বে- বাংলাদেশ ভাবনায় আশা করতাম। তখন চিন্তা করতাম- সারা দেশ জুড়ে মৌলবাদের বিরুদ্বে লড়াই করা এই প্রজন্ম - আইয়ুব বাচ্চু, পার্থ, নাসিম, নকীব খান, জেমস, আজম খান, বিপ্লব, টিপু ভাই সকল সহ সকল ভোকালিষ্ট এবং বাংলা ব্যান্ডের সংগীত জগতের তারকাদের যে অমানষিক কষ্ট এবং দেশের প্রতি ভালোবাসা - সত্যই এই মহান মুক্তিযোদ্বার তাদের নিয়ে সহজ সরল ভালোবাসাময় স্বীকারোক্তি নিশ্চিত বাংলা ব্যান্ড জগতের সকলের জন্য বড় সড় সম্মানের।
যখন বাংলা ব্যান্ডের উথ্থান হয়- তখন ১৯৯০ এবং তৎপরবর্তী। বাংলা ব্যান্ড জগতে- মৌলবাদ এবং মৌলবাদীদের বিরুদ্বে সবচেয়ে বড় যে প্রকাশ্য যোদ্বা তার নাম ফিডব্যাক ব্যান্ড। বাচ্চু ভাই যখন ব্যান্ড জগত নিয়ে সামনে আগাতে থাকে তখনো মৌলবাদের আক্রমন ছিলো যা আমরা পেপার পত্রিকা পড়ে জানতাম সব কিছু বা বিচিত্রা বা ফ্যাশন ম্যাগাজিন পড়ে জানতাম। তারই পরিপ্রেক্ষিতেই ভূমিকা রাখে ১৯৯০ সালের গনজাগরন যেখান থেকে প্রথমে সারা দেশ জুড়ে ফাসির দাবী জানানো হয় রাজাকারদের। সেই ফাসি কার্যকর হওয়া শুরু করে ২০১৩ সালের শাহবাগ গনজাগরনের আন্দোলন থেকে। শাহবাগ গনজাগরনে বাংলাদেশ ব্যান্ড সংগীতের তারকাদের সপ্রতিভ অংশগ্রহন এবং সম্মতি জ্ঞাপন সেই আগেকার ফিডব্যাক ব্যান্ডের (ক্যাসেটাআকারে বের হওয়া কিছু গান) দালাল রাজাকারদের বিরুদ্বে বজ্রকন্ঠের হুশিয়ারির কথা স্মরন করিয়ে দেয়। আবারো বুঝেতে পারি - বড় ভাইরা যে পথ দেখাইয়া দেয় যেই পথে হাটতে শেখায়- সেই পথে হাটলে সাফল্য অনিবার্য। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিধ্যালয় এর আবাসিক এলাকাতে (বাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক) বসবাস করার সুবাদে সেই গনজাগরনে সপ্রতিভ অংশগ্রহন আমার দিলে অনেক নাড়া দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়েল ছাত্র ছাত্রীদের সাথে সেই আন্দোলনে শরীক হওয়া এবং দালাল রাজাকারদের ফাসি চাওয়া- এক স্মরনীয় ব্যাপার ছিলো। সেই সময় মৌলবাদের বিরুদ্বে লড়াই করার এক মাধ্যম ছিলো গনজাগরন- যেখানে থেকে তৈরী হয়েছিলো বা ১০০% একটিভ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি। আমার মনে আছে আজো - আমিও সেই সময়কার সারা দেশের কমিটির সদস্য হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলাম এবং লিষ্টে নিজের নাম দেখে ভীষন খুশী হয়েছিলাম - জয় বাংলায় সাহসী হয়ে উঠেছিলাম অনেক।
একটা সময়ে দালাল রাজাকারেরা বাংলাদেশের সংগীতাজ্ঞনে যে বাধার সৃষ্টি করতো তাকেই বলা হতো সংগীতাজ্ঞনে ধর্মীয় বাধা। একটা ব্যাপার খেয়াল করে দেখবেন- একজন সংগীতজ্ঞ যখন গান গায় সেটা কিন্তু তার গলার সমধূর একটা ব্যাপার হয়ে ধরা দেয় যাকে আমরা গড গিফটেড বলে থাকি। একজন গায়ক বা গায়িকার মেইন ব্যাপারই হইতাছে সুর। তার সুরের যাদুতে সে হাজারো লক্ষ কোটি দর্শকের মন সে জয় করে নেয়। এই সুর কিন্তু ভালোবাসার জগত থেকেই আসে। ১৯৯০ এর দিকে বাংলা ব্যান্ডের ক্রমাগত জনপ্রিয়তার ধারা দেখে এই দেশে দালাল রাজাকার এবং তাদের প্রজন্মের মাথা খারাপ হয়ে উঠে এবং তারা বাংলাদেশের নতুন ধারার ব্যান্ড জগত কে বাধা দেবার চেষ্টা করে। গান ভালোবাসে না এরকম মানুষ আপনি পৃথিবীতে খুজে পাবেন না। গান কে মনের খোরাক বলা হয়। অনেকখানে ধর্মীয় মৌলবাদ গজে উঠার কারনে আমাদের দেশের গান এবং সংগীত জগত বাধা গ্রস্থ হয়। সেই বাধাকে অতিক্রম করার জন্য যে যে পদ্বতি বাংলাদেশে পপুলার হয়ে উঠে তার মধ্যে ব্যান্ড জগতের সাথে থাকা এবং তাদের গান শোনা - এইটা একটা মৌলবাদ এবং ধর্মীয় গোড়ামির বিরুদ্বে প্রতিবাদ ছিলো । আর যারা দুর্বল ছিলো তাদের উপরে দালাল রাজাকার এবং ধর্মীয় মৌলবাদের অত্যাচারের লেভেল টা ছিলো প্রায় আসমান সমান। তাই তাদের দেয়া কষ্ট অনেকই বুকের মধ্যে পুষে রেখে, দামিয়ে চাপিয়ে রেখে পথ চলতে হয়েছিলো। দেশ স্বাধীন হবার পরে বেচে থাকার জন্য রাজাকারেরা বাংলাদেশের ধর্ম কে ব্যবহার করতে শুরু করে (অনেক খানে আজো তারা ধর্ম কে ব্যবহার করে টিকে গেছে - যেমন তালিকাগ্রস্থ রাজাকারদের অনেককেই দেখেছি দাড়ি টুপি পড়ে ঘুরে বেড়াতে যারা কিনা স্বাধীনতা যুদ্বে ছিলো মার্কা মারা রাজাকার আর গনহত্যার আসামী।)সেই সময়ে সবচেয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছিলো এবং আজো পড়ে আছে আগে থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে জয় বাংলা পন্থী যারা মুসলিম ধর্ম পালন করতেছিলো তারা। এই মৌলবাদীদের বিরুদ্বে ফিডব্যাকের (ফিডব্যাক ব্যান্ডের রচনা করা গান সমূহ) ভূমিকা অবিস্মরনীয় এবং কখনো ভুলা যাবে না। ফিডব্যাক এবং মাকসুদ রচিত বাংলা ব্যান্ড এর গান - গনতন্তের পক্ষে এবং মৌলবাদের বিপক্ষে- গভীর রাতে কষ্টে ভেংগে যাওয়া বুকের ভেতরে মোলবাদহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছে যা আজ বাংলাদেশে দেখা যাইতাছে। আজকে এখনকার দিনে ধর্মীয় মৌলবাদের মেইন থাবাটা এই দেশ থেকে সরে গেছে- টিকে আছে ঘুটিকয়েক খানে - যা বাংলাদেশীদের অসতর্কতার বিনিময়ে। যদি সবাই সতর্ক হইতো তাহলে ধর্মীয় মৌলবাদ বা ধর্মীয় জংগিবাদ বা ধর্মীয় গোড়ামি অনেক আগেই আমাদের এই দেশ ছেড়ে চলে যাইতো। ধর্ম কোন জোড় জবরদস্তীর বিষয় না। এইটা পালন করার বিষয়। শুধু ঈমানহারা যেনো না হয় সেই ব্যাপারে জোড় খাটানো যায় কিন্তু জোর করে ধর্ম তো আর কাউকে কে চাপিয়ে দেয়া যায় না বা পালন করতে বাধ্য করা- মৌলবাদের পর্যায়ে পড়ে। ধর্ম কে ভালোবাসতে শিখতে এবং শিখাতে হবে। ধর্ম কে ভালো না বাসলে মাদ্রাসার ছাত্র রা হাফেজ, আলেম, ওলামা বা মাওলানা বা মুফতি হতে পারতো না- আর সারা বিশ্ব ব্যাপী সেই চর্চা ও করতে পারতো না। যে দ্বায়িত্ব হাফেজ, আলেম, ওলামা , মাওলানা বা মুফতি সকলের উপরে আবর্তিত ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে- সেই দ্বায়িত্ব যদি আরবী অক্ষর জ্ঞান বিহীন মানুষের হাতে পড়ে বা রুপ ধরা মানুষের হাতে পড়ে তাহলে তো নিষিদ্ব ঘোষিত মৌলবাদের উথথান বা বিস্তার হতে পারে কারন তারা হয়রত মোহাম্মদ মোস্তফা (আ:) প্রবর্তিত ধর্ম নিজেও যেমন বোঝে না তেমনি আরো একজনকে ও বোঝাতে পারে না সহজে - যে নিজে বোঝে না সে আরেকজন কে বোঝাবে কি করে? ফলে শুরু হয় উল্টা পাল্টা বোঝানো আর যেখান থেকে তৈরী হয় ধর্মীয় বিভ্রান্তি । বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ সম্মানিত আরেম/ওলামা/মাওলানা/মুফতি সকল- এইখানে মুসলিম ধর্ম নিয়ে এখন আর বিভ্রান্তির কোন সুযোগ নাই।মানুষ চাইলেই যে কোন আলেম/ওলামা/মাওলানার কাছে যাইয়া সঠিক সব কিছু জেনে নিতে পারে । সেই জন্য সাধারন শিক্ষায় শিক্ষিত লোকজনকে ধর্মীয় জ্ঞান প্রচারের দ্বায়িত্ব না দিয়ে গনজাগরন ভিত্তিক মুসলিম বাংলাদেশে সম্মানিত হাফেজ, আলেম, ওলামা, মাওলানা, বা মুফতিদেরকে সেই দ্বায়িত্ব একেবারে চিরস্থায়ীভাবে দিয়ে দেয়া হোক যাতে করে এই দেশে আর কখনোই ধর্মীয় মৌলবাদ বা জংগী বাদ বা ধর্মীয় বিভ্যান্তি না গজাতে পারে।
ভালোবাসার গান বা জগত বলতে গেলে যে দুইটা ব্যান্ড কে আমি পছন্দ করতাম তার মধ্যে একটা ছিলো সোলস। তুমুল জনপ্রিয় একক গানের শিল্পী তপন চৌধুরী এবং পার্থ এর কারনে সোলসের নাম ছড়িয়ে পড়ে আকাশে বাতাসে অনকেখানে। তাদের প্রেমের গান গুলো এতো বেশী সাড়া ফেলে যে লোকজন জিজ্ঞাসা করতো - ভাই গানগুলো কি আপনাদের প্রেমিকারা লিখে দেয় নাকি? অনেকেই বলতো হ্যা দেয় - আবার অনেকেই বলতো জানি না তো কে লিখে দেয়? ভালোবেসে অনেকই বাসার ঠিকানায় লিরিকস পাঠাইয়া দেয় আর সেখান থেকেই বেছে বেছে ২/১ টা গান করার চেষ্টা করি এবং সেগুলো আপনাদের ভালো লেগে যায়। সবখানে ভালোবাসা না থাকলে তো এতো সুন্দর মিউজিক ইন্ডাষ্ট্রিজ তৈরী হতো না। এই সকল কালজয়ী গান এখন ইউটিউব দেয়া আছে- মনে চাইলেই শোনা যায়। যাদের টোটাল বাসা ওয়াই ফাই করা ব্রডব্যান্ডের কানেকশনের কল্যানে তাদের জন্য ব্যাপারটা খুবই সহজ- এই গানগুলো শোনা। প্রথমে লিরিকস রচনা করা বা এডিট করা, তারপরে সুর করা, মিউজিক তোলা গিটারে বা ড্রামে , তারপরে লাইভে কম্পোজ করা ষ্টুডিওতে তারপরে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হওয়া, বাজারে ক্যাসেট আনা এবং সেখান থেকে উপার্জিত অর্থ ব্যান্ডের শিল্পীদের হাতে তুলে দেওয়া- নামমাত্র হলেও তাদেরকে সম্মান দেবার চেস্টা করা - এই সকল ব্যাপার স্যাপারের সাথে জড়িত না থেকেও কখনো লিরিকস না লেখা আমি ও নিজেকে সস্মানিত মনে করতাম। এককটা ক্যাসেটের দাম ছিলো প্রথমে ৪৫ টাকা। স্কুল লাইফে ৪৫ টাকা ম্যানেজ করা তো কম কষ্টের ব্যাপার না যেখানে চালের দাম ছিলো ৫ টাকা কেজি। একটা গলীব মানুষের জন্য ৪৫ টাকাতে প্রায় ৯ কেজি চাল হয়- যখনি কোন ক্যাসেট কিনতে যাইতাম বা ক্যাসেটের জোগাড় যন্ত্র করতাম তখনি খেয়াল করতাম যে আমার আশে পাশে কোন গরীব মানূষ অভূক্ত আছে কিনা- যদি তার কোন উপকার হয় সেটা গান শোনার থেকে বেশী কাজে লাগবে। আর যদি কখনো বন্ধুরা বলতো ৫ টা টাকা দে- কয়েকজনে মিলে একটা ক্যাসেট কিনবো তখন আর এই চিন্তাটা করতাম না। ভাবা যায় ৫ টাকা কেজির চাল এখন ৫৫ টাকা কেজি- অনেক গরীব মানুষ না খেয়ে মরে যাবার দশা। যারা প্রভাবশালী তারা হাজার হাজার কোটি টাকা গচ্ছিত করে রেখেছে তাদের হয়তো মনেই থাকে না যে- আজকে মারা গেলে কালকে তার জীবনে সেই টাকা গুলোর আর কোন কাজে লাগবে না। এই ধরনের জীবনমুখী ফিলিংস গুলো আমার মাঝে কাজ করেছে সোলসের কিছু জীবন মুখী গান শুনে। বিশ্ববিধ্যালয় জীবনে শুনেছি সোলসের অনবদ্য সৃষ্টি- মুখরিত জীবন। অনেক ধরনের কম্পোজে র সমাহার এই মুখরিত জীবন। বিশ্ববিদ্যালয় হলে বাংলা ব্যান্ডের ক্যাসেট চালূ করে ১২ টা গান শোনার মনমানসিকতা নিয়ে বা একসাথে বিভিন্ন ব্যান্ডের ১২টা গান শুনতে শুনতে প্লে কার্ড খেলা বা ২৯ খেলাও অনেক জনপ্রিয় ছিলো আমার কাছে।
নগন বাউল খ্যাত গুরু জেমসের আগের ব্যান্ড নাম ছিলো ফিলিংস। গুরু খ্যাত জেমস কে অনায়াসে বাংলা ব্যান্ডের গানের সম্প্রসারনে জেমস ভাই কেও প্রথম সারিতে রাখা যাবে সহজেই। প্রথম বাচ্চু ভাই, তারপরে গুরু খ্যাত আজম খান এবং পরে জেমস ভাই। জেমস ভাই এর ভালো বাসার গান এবং কষ্টের গানগুলো এখনো সীমাহীন জনপ্রিয়। সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে যখনি দেশ সেরা কনসার্ট হইতো তখনি তাদের কে একসাথে পাওয়া যাইতো ষ্টেজে। কিছু কিছূ পারসন ছিলো যারা কখনোই কোন কনসার্ট মিস করতো না। আবার কিছু কিছূ মানুষ ছিলো যারা এক মনে বাংলা ব্যান্ডের চলাফেরার সাথে লেগে থাকতো। কখন গান বের হবে, কোন গান তৈরী হইতাছে, কার কার গান আসতাছে, কারা কারা কোন খানে কবে গান গাইবে, কোন কোন প্রোগ্রাম আসতাছে এই ব্যাপারগুলোর মধ্যে চঞ্চলতা বাড়িয়ে দেয় প্রাইভেট টেলিভিশন জগত - একুশে টিভি, এনটিভি, আর টিভি, বর্তমানে গান বাংলা বা চ্যানেল আই- এদের আয়োজনে সীমাহাীন এবং নিয়মিত প্রোগ্রাম - বাংলা ব্যান্ডের গানগুলোকে নিয়ে যায় আকাশ সম উচ্চতায়। আজকাল কার দিনের ছেলে মেয়েরা যখন বাংলা ব্যান্ডের গান শুনে বা গেয়ে উঠে তখন আমার কাছে মনে হয়- প্রযুক্তি আমাদেরকে এক করে ফেলেছে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা ব্যান্ডের সুরের একটা নিজস্ব ধারা আছে যেখানে মিউজিক শূনলেই বোঝা যায় যে কে কোন ব্যান্ড থেকে সং টা শুরু করতাছে ।আর যারা এই ধারাটাকে বিভক্ত করতে পারে আমার মতে তারাই বাংলা ব্যান্ডের প্রকৃত শ্রোতা।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment
Thanks for your comment. After review it will be publish on our website.
#masudbcl