আমার বাবা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হওয়া সত্বেও কট্টোরপন্থী তাবলীগের সাথে জড়িত ছিলেন ১৯৯০ সাল থেকে (২০০১/০২/০৩ পর্যন্ত । তাছাড়া বাবা উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশ ছিলেন বহুদিন। তাবলীগের লোকজনের কাছে নাটক সিনেমা এবং অভিনয়, গান হইতাছে সরাসরি আস্তাগফিরুল্লাহ বা নাউযুবিল্লাহ এর সমাজ আজো। বিগত সাত বছর যাবত তারা সারা দেশের মসজিদে মারামারি করতাছে দুই গ্ররপে বিভক্ত হয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে (গ্রুপিং এবং লবিং এবং বিভিন্নভাবে সরকারের উপরে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা- সারা দেশের মানুষকে তাবলীগের কাছ থেকে মুখ ফিরাইয়া নিতে বাধ্য করেছে) - সেখানে তাদের আস্তাগফিরুল্লাহ আসে না, কিন্তু অভিনয়, নাটক, সিনেমা এগুলোতে সরাসরি আস্তাগফিরুল্লাহ বলে বসে। আব্বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন বিধায় অনেকটাই উদারপন্থী ছিলেন। এখনো আমাদের নিজস্ব বিল্ডিং এ টিভি বা ডিশ কানেকশণ নাই কিন্তু পুরো বিল্ডিং ওয়াই ফাই করা আছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কানেকশনের জন্য- ইন্টারনেট থেকে সব খবর তাৎক্ষনিক ভাবে পাওয়া যায়- বাসার সবাই ইউটিউব / ইমু ব্যবহার করতে পারে, প্রয়োজনীয় খোজ খবর নিতে পারে। আমি নিজেও একজন ফ্রি ল্যান্সার।
তো সেই সময়ে ১৯৯০ সালের দিকে অন্যান্য টিচার দের বাসাতে যাইয়া নাটক দেখতে পারতাম- বললে আব্বা বা আম্মা অনুমতি দিতো তবে রাত সাড়ে দশটার পরে আর থাকতে দিতো না বাহিরে- যদিও টিচারস কোয়ার্টার ফুল সিকিওরড। মাঝে মাঝে চুরি করে রাতে বের হতাম এবং সেই সময় সিনেমা হলগুলোতে ১৯৯০-১৯৯৮ কোন বাংলা সিনেমা মিস হতো না। সেই সময়ে অনেক কষ্ট করে দেখেছিলাম কোথাও কেউ নেই নাটকটি। ১৯৯৩ সালে কম্পিউটারে হাতে খড়ি- আব্বাই কিনে দেয় কম্পিউটার। এইখানেই আমি আমার বাবার উদারপন্থী মনোভাব টের পাই এবং বুঝতে পারি তাবলীগের কাট খোট্টা মোল্লারা আমার বাবার উপরে বিভিন্ন ধরনের নির্দেশ চাপাইয়া দেয়। তারপরে উইন্ডোজ ৯৫ আসে এবং একসময় ভিসিপি/ভিসিআর/ভিসিডি/সিডি/ডিভিডি তে কোথাও কেউ নেই নাটকটি বা খন্ড খন্ড আবারো দেখা হয়।
হিরোরা কখনো মরে না। হিরোরা চীরজীবন বাচে। মানুষ বাচে তার কর্ম বা শিল্পকর্মের মধ্য দিয়ে। অভিনেতা আবুদল কাদেরের অনেক অনেক অভিনয় আমি দেখেছি- সবচেয়ে ভালো লেগেছে উনি কোন উগ্রতা বা পর্নোগ্রাফিক বা খোলামেলা মেয়েমানুষের অভিনয়ের জন্য নিন্দিত চলচ্চিত্র বা নাটক গুলোতে অভিনয় করতে না । অভিনয় করতেন মান সম্পন্ন নাটক সিনোমগুলোতে গুলোতে- নন্দিত নাটকগুলোতে যেখানে তার অভিনয়ের দক্ষতা সম্পর্কে টের পাওয়া যাইতো্। একটা এক্সট্রা কারিকুলার পারসোনালিটি ছিলো উনার। যেখানে সহজেই প্রথমেই মানুষের শ্রদ্বা কেড়ে নিতেন। উনি আসলে বেচে থাকবে উনার অসংখ্য গুন গ্রাহী লোকজনের মধ্যে তার অভিনয় , শিল্পকর্ম এবং তার অতি মানবীয় পারসোনালটির কারনে। সেদিনের সেই কষ্ট করে দেখা কোথাও কেউ নাই আর আজকের নিজ বাসভবন বা বিল্ডিং এর বসে ওয়াই ফাই এ বসে উনার মৃত্যুখবর শোনার মধ্যে অনেক ফারাক। সময় অনেক পাল্টে গেছে। বিটিভির সাদা কালো নাটক আজকে ইউটিউবের জমকালো নাটকে ঠাই পেয়েছে। হয়তো সামনে আরো অনেক কাজ হবে কিন্তু মানসম্পন্ন কাজ হবে কম বা হয়তো হবেই না বলতে গেলে।
উনাকে স্যালুট। উনার জন্য সম্মান এবং ভালোবাসা। সৃস্টিকর্তা উনাকে সর্ব্বোচ্চ জান্নাতে রাখুক এবং সেই প্রকার শান্তি দান করুক।
No comments:
Post a Comment
Thanks for your comment. After review it will be publish on our website.
#masudbcl